আত্মশক্তি

My photo
আত্মশক্তি ত্রৈমাসিক সাহিত্য সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা

Wednesday, July 8, 2020

আত্মশক্তি , দশম বর্ষ ,প্রথম ও দ্বিতীয় (বৈদ্যুতিন) সংখ্যা-২০২০


আত্মশক্তি 
(বিশ্ব সেবাসংঘ আশ্রম-এর ত্রৈমাসিক মুখপত্র)
Printings Issues ISSN no 2321 5062
সম্পাদকঃ প্রদীপ মণ্ডল
আত্মশক্তি কার্যালয়  
শিমুলপুর,ঠাকুরনগর,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত

 

সূচী
প্রবন্ধঃ
আমার নাটক দেখা, নাটকে জীবন দেখা---অমর মিত্র
একটি কবিতাঃ
অমলেন্দু বিশ্বাস, দয়াময় পোদ্দার, আণিমা মিত্র, বিপ্লব বড়াল,
অর্চনা দে বিশ্বাস, পঙ্কজ কুমার গাইন, হেমন্ত সরখেল,
তন্ময় দত্তগুপ্ত, রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়
দুটি কবিতাঃ
চাণক্য বাড়ৈ, মাধবী দাস, বিদিশা সরকার,
তুষ্টী ভট্টাচার্য, বিপুল চক্রব্ররতী,প্রবীর মণ্ডল
গুচ্ছ কবিতাঃ
তৈমুর খান,প্রদীপ মণ্ডল
অনুগল্পঃ
বোধিসত্ত্ব রায়, দিলীপকুমার মিস্ত্রী, বিদ্যুৎ বিশ্বাস

 

অমর মিত্র

প্রবন্ধঃ ১            

আমার নাটক দেখা, নাটকে জীবন দেখা

অমর মিত্র


     পূর্ববঙ্গের  ধূলিহর গ্রাম,  ধুরলের কথা যা শুনেছি, তেমন কিছু  মনে নেই তবে বাড়ির একটা কামরায় নাটকের বা যাত্রার সিন থাকত গোটানো তা দাদার কাছে শুনেছি সেই সময় নাটক বা যাত্রায় সিন থাকত নদী, গ্রাম, শহর, তাজমহল, দুর্গ ইত্যাদি যাত্রা কিংবা থিয়েটার হতো সমস্ত রাত ধরে শেষ রাত বা মধ্যরাতে সকলে বাড়ি ফিরত কাজকম্মো সেরে, গৃহবধূ সমেত পরিবার গিয়ে বসত থিয়েটার বা যাত্রার আসরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি গল্পের কথা মনে পড়ছে আমোদ সেই গল্পে ভূমিহীন চাষাটি একদম পেছনে দাঁড়িয়ে, ডিঙি মেরে মেরে কী দেখল, কী দেখল না, সমস্ত রাত কাটিয়ে, বাজনা আবছা শুনে, ডায়ালগ একটু শুনে শুনে রাত পার করে দিল দেখুক না দেখুক, আমোদ তো হলো থিয়েটার শেষ হতে ভোর সে চলল জমিতে নিড়েন দেবে সেই দেখা নিয়ে সে কতদিন বুঁদ হয়ে থাকবে এই অল্পতে খুশি হওয়াই সাধারণের জীবন দর্শন আর এও মনে হয়, থিয়েটারের দর্শনও তাই থিয়েটারে মোটর রেসিং, নেই, হেলিকপ্টারে করে খল নায়কের পালানো নেই, শতবার পোশাক বদলে নৃত্যগীত নেই, কিন্তু থিয়েটার হাউসফুল হ্যাঁ, অনেক থিয়েটার দর্শক আনুকূল্য পায় না, সে তো বহু সিনেমাও লোকে দ্যাখে না না, আমি সিনেমা থিয়েটারের তুলনামূলক আলোচনা করতে বসিনি থিয়েটার সম্পর্কে আমার জ্ঞান তেমন নয়, সিনেমাও তেমন জানি না দুটোই নিজের মতো করে দেখেছি অনেক মনের টানে, নিজের প্রয়োজনে দেখেছি দেখে ঋদ্ধ হয়েছি আমার কাছে বই আর থিয়েটার, সিনেমা শ্রেষ্ঠ বিনোদন বিনোদন শব্দে কোনো আপত্তি দেখি না কেন না ভিন্ন ভিন্ন রুচির মানুষের কাছে বিনোদনের ভিন্ন ভিন্ন রূপ মারীচ সংবাদ, রাজরক্ত বা চাকভাঙা মধু আমাকে মোহিত করেছিল প্রায় বছর ৪৩-৪৪ আগে, প্রযোজনা অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছিল বলেই না বার বার দেখেছিলাম আমার মনের অনেক চাহিদা আছে সেই চাহিদা পূরণ করে থিয়েটার ও বই, এবং সিনেমাও থিয়েটার হলো দৃশ্য কাব্য আমি তার কথা বলতে চেষ্টা করব    
 

 ছেলেবেলা কেটেছে বসিরহাটের লাগোয়া  দন্ডিরহাট নামের একটি গ্রামে বেশ কিছুদিন, পরে কলকাতার  বেলগাছিয়া দন্ডীরহাট গ্রামটি ছিল থিয়েটার আর খেলা, দুয়েই পাগল পাশে একটি বিল জমি পেরিয়ে ধলতিথা বিভূতিবাবুর পথের পাঁচালী উপন্যাসে ধলতিথার কথা আছে ধলতিথা পেরিয়ে পানিতরে তাঁর প্রথম বিবাহ থাক, দন্ডিরহাট গ্রামের থিয়েটারের কথা বলি আমি তখন কত হবো, বছর সাত-আট, মা-কাকিমাদের সঙ্গে গিয়ে প্রথম অসামান্য এক থিয়েটার দেখি, ডি,এল, রায়ের শাজাহান শাজাহানের ভূমিকায় ছিলেন আমাদের গ্রামের অতিমান্য এবং শ্রদ্ধেয়জন, সুধীর বসু  তিনি ওই গ্রামের পোস্ট মাস্টার ছিলেন তাঁর ভাই সূরথবাবু ছিলেন স্থানীয় স্কুলের হেড মাস্টার, থিয়েটার সাহিত্যে উৎসাহী সেই শাজাহান নাটকে জাহানারার ভূমিকায় ছিলেন মমতা চট্টোপাধ্যায়, সেই আমলের এক বিখ্যাত অভিনেত্রী দারার ভূমিকায় শ্যামল ঘোষ, দিলদার মনোজ মিত্র মনোজ মিত্রই হয় তো এই আয়োজন করেছিলেন মনে আছে শাজাহান এবং জাহানারার হাহাকারের কথা, দূরে তাজমহলের মাথায় পূর্ণচন্দ্র সিন আর গ্লোব আলো দিয়ে তা ফোটানো হয়েছিল বিস্ময়ের ঘোর কাটতে কয়েকদিন কেটেছিল যাঁকে নিত্য দেখি তিনি কীভাবে মঞ্চে শাজাহান হয়ে গেলেন সেই প্রথম দেখা এখনো অবিকল মনে আছে আমাদের ওই গ্রামে তরুণ ভট্টাচায নামে এক যুবক ছিলেন থিয়েটার আর বই পাগল আমি ক্লাস সিক্স এবং সেভেন ওই গ্রামের ইস্কুলে পড়েছিলাম তারপর পালিয়ে কলকাতা চলে আসায় কলকাতার বাসা বাড়ি বেলগাছিয়ায় ফিরে এলাম কিন্তু ঐ দুবছরেই তরুনদা আমাকে থিয়েটার আর বই পড়ায় দীক্ষিত করেন দন্ডীরহাট গ্রামের বসু জমিদারদের রেখে যাওয়া বাড়িতে ছিল বড় এক পাঠাগার সেই পাঠাগার ছিল তরুণদার দায়িত্বে এ ব্যতীত তিনি ছিলেন পোস্ট অফিসের ডাক পিয়ন চিঠি বিলি করতেন সাব পোস্ট অফিসের অনেক কাজই করতেন চিঠিতে সিল মারা, ডাকের থলেতে ভর্তি করা হরকরার চিঠি রিসিভ করা...সব আড়াইটে অবধি হয়তো এই কাজ, তারপর লাইব্রেরি আমাকে  হেমেন্দ্রকুমার রায় থেকে দীনেন্দ্রকুমার রায়ের রবার্ট ব্লেক, অনুবাদে অলিভার টুইস্ট, এ টেল অফ টু সিটিজ, হ্যাঞ্চব্যাক অফ নতরদম...কত বই দিয়েছেন তাঁর উচ্চাশা ছিল বড় অভিনেতা কিংবা থিয়েটার পরিচালক হবেন গ্রামের বালকদের নিয়ে প্রায়ই তিনি থিয়েটারের আয়োজন করতেন আমার প্রথম অভিনয় সুনির্মল বসুর কিপ্টে ঠাকুরদা নাটকে ঠাকুরদা হয়েছিলেন তরুণদা ......... নিজেরাই স্টেজ বেঁধেছি হরিতলায়, হ্যাজাক ভাড়া করা হয়েছে চাঁদা তুলে রাত আটটায় অভিনয় আরম্ভ মা-কাকিরা হেরিকেন নিয়ে থিয়েটার দেখতে হাজির হটাৎ হঠাৎ থিয়েটারের নেশা জাগত পাঠ্য পুস্তক কিশলয় বা পাঠসঞ্চয়নের নাট্যাংশ নিয়ে নিজেরা রিহার্সাল আরম্ভ করতাম অমল ও দইওয়ালা, হলদিঘাটের যুদ্ধ এসব আমরা বালকেরাই করতাম দুটি পরপর অভিনয় হচ্ছে এমন নাটক পাগল গ্রাম আর দেখিনি আমি তো সমস্ত জীবনে কম গ্রাম ঘুরিনি কোথাও দেখিনি কিশোর বালকেরা থিয়েটার করছে, তা দেখতে রাতের বেলা গাঁ ভেঙে পড়ছে প্রায়, আশ্চয লাগে এখন আমিও ছেলেবেলায় অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম প্রায়ই নেমে পড়তাম নাটক নিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রহসন ছাত্রের পরীক্ষায় ছাত্র হয়েছি, আরো কী কী যেন অভিনয় হয়েছিল হ্যাঁ, তরুণদাকে নিয়ে আমি একটি উপন্যাস লিখেছিলাম, মালতী মাধব ডাকপিয়ন তরুণদা ছিলেন সেখানে অলৌকিক হয়ে বেনামে চিঠি লিখে ডাকপিয়ন ডাকঘরের সিল মেরে সেই চিঠি যাকে গোপনে ভালবাসতেন, তার কাছে পৌঁছে দিতেন

   কলকাতায় তখন রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ইস্কুলে পাড়ায় রবীন্দ্রনাটক করার রেওয়াজ ছিল বাড়ির ছাদেও মঞ্চ বেঁধে অভিনয় হতো ছাত্রের পরীক্ষা, পেটেও পিঠে... ইস্কুলে আমি মুকুট নাটকে হয়েছিলাম ধুরন্ধর প্রাইজ পেতে পেতে পাইনি রাজধর যে হয়েছিল, সে পেয়েছিল পরিবারে দেখেছি অগ্রজ নাটক নিয়ে থাকেন ঠাকুরদাকে নিয়েমৃত্যুর চোখে জলনাটক লিখে তাঁর নাম হয়েছে তখন ক্লাস ফাইব, আনন্দবাজারে নবনাট্য আন্দোলন নিয়ে লিখতেন প্রবোধবন্ধু অধিকারি দাদাকে নিয়ে লিখেছিলেন তিনি ছবি সমেত সেই লেখা বেরিয়েছিল, পরম বিস্ময় সুতরাং আমি নাটক লিখব এবং অভিনেতাও হবো, এই ছিল সুপ্ত বাসনা ক্লাস এইটে ঋতায়ন নাট্যদলেরনীলানাটকে আমি বড় একটা রোল করেছিলাম আনন্দ আনন্দবাজারে নাট্য সমালোচনায় লিখেছিল, ‘বাবুজি মিত্রের আনন্দ নিরানন্দ নয়  বাবুজি আমার ডাক নাম নীলার দুটি অভিনয়ে আমি ছিলাম, মিনারভা ও থিয়েটার সেন্টারে মিনারভায় অভিনয় করতে গিয়ে দেখেছিলাম কল্লোল নাটকের জাহাজের সেট এখন মনে পড়লে শিহরিত হই আমি কল্লোল দেখিনি কত নাটক দেখিনি, কত বই পড়িনি, এমন তো হয়েই থাকে ক্লাস ইলেভেনেবিনি পয়সার ভোজ’ –অক্ষয়বাবুর সেই স্বগত কথনে আমি চরিত্র বসিয়ে নাটক বানিয়ে মঞ্চায়িত করলাম বন্ধুদের নিয়ে আমিই অক্ষয়বাবু  এরপর কলেজ তখন গল্প লেখা চলছে আর নাটকও পাড়ার একাঙ্ক নাট্য প্রতিযোগিতায় নাটক নিয়ে নামলাম, পার্থপ্রতিম চৌধুরীর একাঙ্ক আমি অভিনেতা এবং নির্দেশক কিছু হলো না খেলনা পিস্তলকে রিভলবার বানাতে আলকাতরা দিয়ে কালো করেছিলাম সিল্কের পাঞ্জাবির পকেটে সেই পিস্তল আটকে গিয়েছিল লাইটম্যান মঞ্চটাকে ভুতুড়ে করে দিয়েছিল চরিত্রদের দেখাই যাচ্ছিল না কলেজ ছিল স্কটিশ চার্চ নাটকে সাহিত্যে সেই কলেজের কত সুখ্যাতি আমি কেমিস্ট্রি অনার্স যে উদ্দেশে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম, তা সফল হলো না বার্ষিক অনুষ্ঠানে ঋত্বিক ঘটকের জ্বালা অভিনয় হবে, গেলাম যদি একটা চান্স হয় পেলাম না গল্প দিলাম কলেজ ম্যাগাজিনে, নির্বাচিত হলো না নাটক আর গল্প লেখার জন্য স্কটিশে ভর্তি হয়ে কোনোটাতেই সুবিধে হলো না আর রেজাল্টও খারাপ হলো স্কটিশ চার্চ কলেজে তখন কেয়া চক্রবর্তী পড়াতেন দূর থেকে দেখতাম কবি পার্থপ্রতিম কাঞ্জিলাল ও নিশীথ ভড়ের তখনই খুব নাম এত অতি সাধারণ হয়ে কলেজ ত্যাগ করেছিলাম যে কলেজের শতবর্ষ উৎসবেও আমার ডাক আসেনি কিন্তু আমার মাথায় নাটক আর সাহিত্যের ভূত হয় তো স্কটিশ চার্চ কলেজই দিয়েছিল বাংলাদেশ নিয়ে তরুণ সান্যালের বক্তৃতা এখনো স্মৃতিতে অমলিন কত ডিবেট, সাহিত্যের অধ্যাপকদের সেমিনার, আমি রসায়নের ছাত্র, একাই শুনতাম সত্তর দশক নক্সাল আন্দোলন, জেলখানায় সহপাঠী বন্ধুরা, বাংলা নাটক তখন প্রতিবাদের মুখ আমি তখন থেকে নাটকের পোকা নাটক দেখছি সুযোগ পেলেই মনে পড়ে এবং ইন্দ্রজিৎ দেখতে দুপুরে মুক্তাঙ্গনে গিয়ে টিকিট কেটেছি, সময়ে এলে যদি টিকিট না পাই চারঘন্টা অপেক্ষা করেছি একা একা তারপর নাটক দেখে ২ নম্বর ডাবল ডেকার বাসে  চেপে দক্ষিণ থেকে উত্তরে তখন টিউশনি ভরসা সেই সময়ে আমি নাট্যরূপ দিলাম  চেকভের গল্পে মুখোস সেই নাটক সূত্রে এক বন্ধু হলো, তার নাম গৌতম লাহিড়ী পাইকপাড়ায়, দুনম্বর বাস স্ট্যান্ডের কাছে থাকতেন, গণেশ মুখোপাধ্যায়ের নাট্যদল শ্রীমঞ্চে  অভিনয় করতেন গৌতম আমার ওই চেকভের গল্পের নাটক নিয়ে চেষ্টা করলেন মঞ্চে আনার হলো না কিন্তু ও থিয়েটার নাটকে নিবেদিত প্রাণ ওর সঙ্গে আমার নাটক দেখা শুরু হলো সেই সময়, আমাদের বাংলা নাটকের স্বর্ণ যুগ বহুরূপী, লিটল থিয়েটার গ্রুপ, শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্তর পরের প্রজন্ম প্রবেশ করেছেন, তাঁদের পরের প্রজন্মও উত্তর কলকাতায় রঙ্গনা থিয়েটার হল হলো আর পুরোন ব্যবসায়িক থিয়েটার তখনো রমরম করে চলছে জনপ্রিয় সাহিত্যের নাট্যরূপ দিয়ে নাটক হতো বিশ্বরূপা, স্টার, রংমহল থিয়েটার হলে এখানে চলচ্চিত্রের প্রবাদ প্রতিম অভিনেতারা অভিনয় করতেন, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, জহর রায়, হরিধন মুখোপাধ্যায়, অজিত চট্টোপাধ্যায়দের আমি এখানেই দেখেছি অভিনয় করতে উত্তমকুমারের শ্যামলী নাটকের কথা শুনেছি, তখন আমাদের খুব কম বয়স, দেখিনি হাতিবাগানের থিয়েটার পাড়া ছিল আমাদের সত্যিকারের গর্ব শুনুন, বাংলাদেশের খুলনা জেলার এক গৃহবধূ আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড দীপালি মন্ডল তিনি একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, দাদা আপনার বাড়ি কোথায়  

উত্তর কলকাতায়

   কলকাতার যেখেনে খুব থিয়েটার হয়, রংমহল হল কি কাছে ?     

   হ্যাঁ, কেন ?

   আপনার ভাই, থিয়েটার পাগল, সে বলে আবার একবার গিয়ে হাতিবাগানে থিয়েটার দেখবে

  সেই ব্যক্তি আমারই বয়সী অনেক বছর আগে কলকাতায় এসে একবার রংমহল থিয়েটারে কোনো একটি নাটক দেখেছিলেন এখনো আশা করে আছেন কলকাতায় এসে দেখবেন জহর রায়, হরিধন বন্দ্যোপাধ্যায়, নৃপতি চট্টোপাধ্যায়দের কমেডি

   আমাদের বাড়িতে অনেক নাট্যপত্র আসত এপিক থিয়েটার, গন্ধর্ব, সুত্রধার, নাট্য পাক্ষিক, বিংশ শতাব্দী......আরো কী কী যেন কোন একটা সময়ে আমি এপিক থিয়েটার শারদীয় সংখ্যায় পড়ি উৎপল দত্তের মানুষের অধিকারে সে এক অসামান্য অভিজ্ঞতা নাট্যপত্রগুলি আমি পড়তাম আমাদের বাড়িতে ছেলেবেলা থেকেই নাটকের লোক আসতেন পার্থ প্রতিম চৌধুরীকে ছেলেবেলা থেকে দেখেছি যখন কলেজে সেই সময়ে বোধ হয় চাকভাঙা মধু লেখা হয় একদিন পার্থদা এলেন সমস্ত রাত তাঁরা হয়তো সেই নাটক পাঠ আর আলোচনা করেছিলেন আমার প্রবেশাধিকার নেই সেই নাটক এক্ষণ পত্রিকায় ছাপা হলে আমি পড়লাম সঙ্গে হাসান আজিজুল হকেরজীবন ঘষে আগুন  সেই নাটক করলেন থিয়েটার ওয়ার্কশপ, বিভাস চক্রবর্তী, অশোক মুখোপাধ্যায়, মানিক রায়চৌধুরী, রাম মুখোপাধ্যায় এবং মায়া ঘোষ মানিক রায় চৌধুরীর কথা খুব মনে পড়ে খুব শক্তিমান অভিনেতা ছিলেন অল্প বয়সে চলে গেছেন পাঁচু ও মাসি নাটকে মানিকদার অভিনয় এখনো মনে আছে চাকভাঙা মধুতে জোতদার অঘোর ঘোষের ছেলে শঙ্করও অসামান্য  থিয়েটার ওয়ার্কশপ চাকভাঙা মধুর আগে করেছিল  মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের রাজরক্ত রাজরক্ত দেখা ছিল এক অসামান্য অভিজ্ঞতা মোহিত চট্টোপাধ্যায় আমার প্রিয় নাটককার মৃত্যু সংবাদ, ক্যাপ্টেন হুররা তো পাঠ্য নাটক নক্ষত্র করেছিল এই দুই নাটক শ্যামল ঘোষ ছিলেন কারিগর কত কম বয়সে মোহিতদার কিমিতিবাদী নাটক গন্ধরাজের হাততালি দেখেছিলাম, ঋতায়ন করেছিল এক রবিবার সকালে রংমহলে সত্তর দশক বিদ্রোহের দশক নাটকের দশক বিদ্রোহ ছিল সেই সব নাটকেও চেতনার মারীচ সংবাদ, ও লু সুনের গল্প নিয়ে নাটক নিয়ে এসেছিল বাংলা নাটকে নতুন বাঁক, বিশেষত মারীচ সংবাদ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে এই নাটক সেই সময়কে চিহ্নিত করেছিল কী সমস্ত নাটক দেখেছি, পিপলস লিটল থিয়েটারের টিনের তলোয়ার, তীর, মধুসুদনের প্রহসনে উৎপল দত্ত, একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ...অসিত বসু করেছিলেনকলকাতার হ্যামলেটচাকভাঙা মধুও ছিল বাংলা নাটকের এক বাঁক এর পর থিয়েটার ওয়ার্কশপ দুটি নাটক নরক গুলজার, অশ্বত্থামা...... আর নতুন হল রঙ্গনায় নান্দীকার চেখব থেকে মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, গ্রেট অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়......জমি বাগান কিনে নিতে নিতে উরুতে চড় মারতে মারতে উল্লাস প্রকাশ... অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় দেখা এই জীবনের পরম সৌভাগ্য শের আফগান,  ভালো মানুষ, তিন পয়সার পালা, যখন একা, নাট্যকারের সন্ধানে ছটি চরিত্র, খড়ির গন্ডী... তখন গোটা কলকাতা নান্দীকার এবং বিদেশী নাটকে ভেসে গিয়েছিল দূর মফস্বল থেকেও মানুষ আসত নাটকে চারদিকের ভয়ানক অবস্থায় নাটকের ভিতরেই যেন পরিত্রাণ খোঁজা অজিতেশ, কেয়া চক্রবর্তী, রুদ্রপ্রসাদ... তিন পয়সার পালা এবং ভালোমানুষ নাটকে কেয়া চক্রবর্তীর অভিনয় তো ভুলিনি শান্তা এবং শান্তা প্রসাদ  নান্দীকারের হে সময় উত্তাল সময় কিন্তু তেমন সফলতা পায়নি, দেখেছিলাম পরে অজিতেশ নান্দীমুখ নাট্যদল করে তলস্তয়কে মঞ্চে এনেছিলেন, পাপ পুন্য গ্রেটনেস বোঝা গিয়েছিল সেই নাটকেও কেয়া চক্রবর্তীর অভিনয় সুষমার কথাও এখন মনে পড়ে বছর ৪২ আগের কথা সব বিভাসদা থিয়েটার ওয়ার্কশপ ছেড়ে অন্য থিয়েটার করলেন, মৈমনসিংহ গীতিকা নিয়ে মাধব মালঞ্চী কন্যা করেছিলেন আটের দশকে

   আমি মৃত্যুর চোখে জল নাটক দেখিনি, পড়েছি নাটক পাঠ আমার পুরোন অভ্যাস রক্তকরবী, ডাকঘর ও বিসর্জন আমি মাঝে মধ্যে পড়ি সাহিত্য পাঠের মতো করেই আমার প্রিয় পাঠ চাঁদ বণিকের পালা কতবার পড়েছি পড়েছি এবং ইন্দ্রজিৎ,  যা নেই ভারতে, অশ্বত্থামা, কিনু কাহারের থেটার, পরবাসও মনোজ মিত্রের একাঙ্ক, তাঁর নাটকে অসামান্য সাহিত্যগুণ আছে মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাটকেও তাই সুতরাং  পড়তেই  হয় মধুসূদনের প্রহসন দেবাশিস মজুমদারের অসমাপ্ত দেখে মনে হয়েছিল একটি ছোটগল্প তখন বিকেল দেখে সেই উপলব্ধি হয়েছিল কবিতা নাটকের গল্প, ব্রাত্য বসুর সিনেমার মতো, মনে হয়েছিল উপন্যাস ফিরে যাই সেই সত্তরে, আমি নাটক লিখব, অভিনয় করব, এইসব ভাবতে ভাবতে চাকরি নিয়ে দূর মফস্বলে চলে যাই গল্প নাটক লেখার ইচ্ছে অস্তমিত হয় নিজের ভিতরে গল্প লিখতে মন দিই কিন্তু কলকাতায় এলে নাটক দেখা বন্ধ হয়নি নাটক মূলত সংলাপ নির্ভর কিন্তু মনে হয় সংলাপের ভিতরে কোথাও কি গভীর এক নীরবতাকে রক্ষা করা যায় না? সংলাপ যেন কথা কথা আর কথা না হয় কথা যেন হল্লা না হয়ে ওঠে নাটক লিখিনি, কিন্তু আমার গল্পে সংলাপ থাকে অনেক সংলাপে সংলাপে আমি গল্প লিখেছি সাতের দশকে সাজানো বাগান তো কিংবদন্তীর মতো হয়ে গেছে  এই সময়ে বালুরঘাটে বসে হরিমাধব মুখোপাধ্যায় করলেন অভিজিৎ সেনের গল্প নিয়ে নাটক দেবাংশী, মহাশ্বেতা দেবীর গল্প নিয়ে জল আমি কোন নাটক ছেড়ে কোন নাটকের কথা বলব ?  নীলকন্ঠ সেনগুপ্ত করেছিলেন, প্রেমচাঁদের গল্প নিয়ে দানসাগর দেবাশিস মজুমদারের নাটক মনে আছে শাঁওলি মিত্রর একক অভিনয়ে নাথবতী অনাথবত মহাভারতের অসামান্য এক বিনির্মাণ ছিল তা নয়ের দশকে দায়বদ্ধ, দুই হুজুরের গল্প চন্দন সেনের নাটক, বিভাস চক্রবর্তী করেছিলেন শ্বেতসন্ত্রাস......আসলে আমার নাটক দেখা সুখস্মৃতিতে পূর্ণ মনে পড়ছে উইংকিল টুইংকিল, ব্রাত্যর নাটক, দেবেশের নির্দেশনা ওই নাটক একটি বাঁক ছিল স্থবির সময়ে আঘাত ছিল ভাল নাটক দেখেছি অনেক লিস্ট করতে গেলে দীর্ঘ হয়ে যাবে আর সেই ভাল নাটকের দিন এখনো রয়েছে থিয়েটারে  আলস্যের কোনো জায়গা নেই  যিনি গল্প লেখেন, উপন্যাস লেখেন, তিনি আসলে অলস এক ব্যক্তি তাঁর দ্বারা নাটক হয় না কিন্তু নাটকে তাঁর আগ্রহ প্রবল, বাড়িতে তো নাটক ছাড়া কথা নেই, সেই ১৯৫৯ সালের  মৃত্যুর চোখে জলনাটক থেকে আমাদের ঠাকুরদা ওই নাটকের বঙ্কিম আমি যে লিখিনি তা নয় নিজের গল্প কুলছুমের হাত ও আসনবনি রেডিও নাটক করে দিয়েছিলাম টিভির স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম কয়েকটি গল্পের আমার উপন্যাস এবং গল্প নিয়ে ছয়টি  নাটক হয়েছে সায়ক চারটি এবং কল্যাণী নাট্যচর্চা কেন্দ্র দুটি  আমি এতে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছি আর জীবনে   একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক লিখে বসে আছি, তা করিমপুর ও বাঙ্গালুরুর দুই নাট্যদল দুই নামে করছে নাটকটির নাম, শেষপাহাড় অশ্রুনদী 


কবিতাঃ ১

অমলেন্দু বিশ্বাস

অ ম লে ন্দু  বি শ্বা  স 
লকডাউনের কবিতা---৯
 
নির্জন নিবিড় হলে ঊর্ণাজাল অরুনাক্ষ ধরে
হাঁটতে থাকে সুশোভন শ্রীবাস অঙ্গনে।
 
মধ্যযাম নির্জনতা পার হ’লে অপরূপ লাবণ্য 
তোমার চোখের গ্রহ থেকে ঊষালগ্ন রূপে
 
রূপান্তরের স্তধি। ললাটে জাগর অনন্য আহিরা
সাদর আসনখানি সুবাসিত অমল ফুলের--- 
ফোটা শব্দে সমুজ্জ্বল আমাদের পরম নৈবেদ্য।
 
নিবেদিত উপাচারে নিষ্ঠজন একান্ত সাধ 
দুরূহ পথের আলো রয়েছে নিহিত গুপ্ত গৃহে।
 
ফিকে রঙ প্রত্নলিপি চোখতুললে বুঝে নাও
তোমার অমোঘ ভাষা নীল নিরন্তর হৃৎকমল। 

১০.
কুহক মোড়ানো পথ বুনোগুল্ম
ঝুলে থাকে ভোর পাখি শিস।
বনের ভেতর অপ্রতিম---
ফুলেল সুরভী তবে নয়---
অবকীর্ণ; প্রসন্ন প্রত্যুষে---
কারো পথ চেয়ে প্রতীক্ষায়—
বসে থেকে মাটির দাওয়ায়---
রেখে গেছে মরমী সারিন্দা
তুলে নিয়ে আমি কী বাজাব 
অলিখিত, অরব সঞ্চারী!
 


কবিতা ঃ ২

দ য়া ম য়  পো দ্দা র                                         
দয়াময় পোদ্দার
জন্মদিন
 
যতবার ভাবি এইবুঝি মৃত্যু এল,
ভাবি- সমাগত খই ছড়ানো জীবন;
লাউমাচায় লতিয়ে চলা আগাগুলো
সামলে রাখে এক অন্ধযুবতী, তার
কোমল ফরসা আঙুলের স্পর্শে জাগে
সবুজ-বাহার। মেঘেদের ছুঁয়ে যায়
শুভ আকুলতা, বৃষ্টি নামে উপকূলে,
সাঁকো পার হয়ে যায় - হাওয়ার বাঁশি।
চিলতে উঠোনে নৃত্য অভিমানী যেন-
শারীরিক এলাকা সমূহে ভেজা পুঁথি,
মতুয়া নিশানের কলার মোচা জোড়া
ঝকঝকে পিতলিয়া স্তনদুটি, মাঝে
পথটি অববাহিকা হয়ে নেমে গেছে
গিরিখাতে। তার সমতলে অন্তরাত্মা
ঘুমন্ত সাপটি। বাঁশরিয়া, বাঁশিতে ফুঁ-
দিলে, ফনা মুক্ত হয়ে মাথা তোলে সাপ,
আলিঙ্গন সমৃদ্ধ-মুদ্রায় ঢেউ দেয়
পলিমাটি চূর্ণ, অতিথি নই যে আমি,
বালাম চালের পায়েষ থালায় করে

সামনে দিয়েছ- আজ শুধু জন্মদিন !


 
কবিতাঃ--৩ 
অ ণি মা  মি ত্র 
অনিমা মিত্র
তামসপুরাণ---

নিরম্বু উপবাস উচ্ছন্নে দিয়ে
অণিমা বিভূতি মেখে শূন্যে উড়ান—
কৃত্তিকা খ'সে পড়ে।
সামিয়ানা ফুটো ক'রে অপার বিস্ময়!
ভ্রামরী আকাশ ব্রীড়াচ্ছলে
ফুটি ফুটি বাতির প্রকাশ।
বাতিটির হস্ত নাই, পদ নাই
শুধু  দুই বিষমবাহুর ত্রিভুজ ঘিরে কবচ স্থাপন।
নিষিদ্ধ পল্লীতে কশেরুকা বেয়ে শ্রমশান্তজল। অষ্টসখীরস।
গতিসত্তমকন্যা তুলাদণ্ডে তৌল করে পঞ্চসাধন।
আমি কবি, দেখি তার মদনমন্দিরে

প্রদ্যুম্ন সুহাস মাখা তামসপুরাণ।



কবিতাঃ--৪ 
বিপ্লব বড়াল
বিপ্লব বড়াল
প্রেমের শীর্ষে
 
ফিরিয়েছো মেয়ে। তা বেশ, প্রেম তো ফেরাতে
পারনি।
ভালোবাসা আমি রেখেছি তোমার কাছেই
এই ভেবে অন্ধকার গাছটিকে দিই মৃত জোনাকির
আলো
ফিরিয়েছো মেয়ে। তা হোক, ফেরারানোও  আশ্চর্য
গ্রহণ।
ভালোবাসি। ভালোবাসি। এখনও যে পথ ধরে
হাঁটো
তার দিকে রেখে দেব দু চোখের পাখি
আমি তারপরে.... অপেক্ষার ধ্যানঘরে
থাকি।
গাছের পাতার মত ঝড়,জল,কত সহ্য করি
মনে মনে সাত পা হেঁটে; আমিও তোমার বন্ধু হই

মনে মনে এত ভালোবাসি, অন্ধকারে পাতার মতই।



কবিতাঃ ৫
অর্চনা দে বিশ্বাস

অ র্চ না  দে বি শ্বা স
এক সুতোয় বাঁধা
 
প্রতিটি মৃত্যু সংবাদে বুকটা কেঁপে ওঠে
প্রতিবারই মনের মধ্যে হেঁটে ইয়ায় ভয়
জীবনের চির সত্যটি মনের আগোচরে
একটু একটু ডানা নাড়ে;
জানান দেয় দিন ফুরিয়ে আসছে।
মাকড়াসার জালের মত পৃথিবী জুড়ে
আতঙ্ক বুনন,
ক্রমাগত মৃত্যুর মিছিল চলছে---
প্রতিটি মৃত্যু প্রিয়জনের সঙ্গে বিচ্ছেদ।
এই নৈকট্য বড় অনুভবি,---
আগে বুঝতে পারেনি কখনও
কেবল গ্রাম নগর নয় দেশ মহাদেশ নিয়ে
আস্ত পৃথিবীটাই এখন আমার ঘর
আমার ভাই আমার পরিবার,
এক সুতোয় বেঁধে ফেলেছে অচেনা মানুষ।
সবাই প্রিয়জন
ভালবাসার চেয়ে আতঙ্ক বড় বেশি
সঙ্ক্রমণ ছড়ায়


কবিতাঃ৬
পঙ্কজকুমার গাইন


প ঙ্ক জ কু মা র  গা ই ন
প্রকৃতি ও আমরা
 
মুহূর্তের সমাবেশ প্রতিটি দিন
ঘন অন্ধকারে দৃষ্টিহীন 
তবু সন্ধিক্ষন ভুলে যায় না
রাত শেষের আগমনী উষা আবার 
দিবান্তে ঐ রাতকেই বরণ করে গোধূলি 
প্রকৃতি ভুলে যায় না ঐ যে--- 
গ্রীষ্ম বর্ষা শরৎ হেমন্ত শীত বসন্ত। আমি তুমি---
 
কবে ফিরে পাবে আত্মস্মৃতি
মূর্ত বিমূর্তের দোলাচলে আস্থা-বিশ্বাস কে মর্যাদা দানে। 
ও তুমি --আমি --আমরা 
আস্থাশীল হবো  সেইক্ষণে  আহবানে 
পথে নেমে পথ চলি ---একসাথে।

কবিতাঃ৭ 
হেমন্ত সরখেল

হেমন্ত সরখেল 
তট
 
ক্রমাগত বাঁচার ইচ্ছে কমে আসছে
শৈথিল্যে ডুবছে চটক
স্পন্দনেও যে মাংস গলে যায় সেটা বলে দেয়নি আমায় কোনো বিজ্ঞান
তটে দাঁড়িয়ে এখন
হাতে লেন্স
খুঁজে চলেছি গতরাতের প্রিয় দাগ
গত রাতে আমরা বসেছিলাম এখানে
এখান থেকে সমুদ্রের বিপরিতে তাকালে আশ্রমিক
আবাসনের বিষন্ন স্নানঘর হা করে আছে বোঝা যায়  
অঝোর শ্রাবণ বলেছে গত মধ্য রাত সে ঘরটুকু ঘিরে
শাওয়ারের ভেতরে মেঘ জমে কখন সেটা সবথেকে ভালো জানে চোখ
আজ ফিরে যাব সন্ধের ট্রেনে
আমরা ফিরে যাই সবখান থেকে
কোথাও থাকতে চাইলেই কি থাকা যায় ?
শর্তাধীন আমরা আসতে পারি ফিরে যাওয়ার জন্য
কোনো বসতে-ই থেকে যাওয়া আঁকা নেই  
তবু একবার,শেষবার তোমায় জিজ্ঞেসের ইচ্ছা জাগিয়ে রাখতে চাই
থাকবে কি তুমি ? আমি থাকতে চাই
তোমার সাথে থাকবো কথা যে দিয়েছি বহুকাল আগে, উত্তর দাও,
চুপ করে থেকো না, মন  
আজ দেহ ফিরে যাবে
 
যাবে তুমি ? 


কবিতাঃ৮ 
তন্ময়  দত্তগুপ্ত
ত ন্ম  য় দ ত্ত  গু প্ত
বিষকণ‍্যা
 
আকাশে বাতাসে মৃত‍্যুর পরোয়ানা
ঢেউ নামে ওঠে অতসী ফাল্গুনে
স্পর্শের অভিমানী দূরত্ব মেনে
মন পুকুরে শঙ্কিত গানে গানে
 
অবুঝের আল্লাদ মেটাতে মেটাতে
প্রকৃতির চোখে অভিশপ্ত জল
দম্ভের দিগন্ত সীমানা কমায়
ভয়ের সুড়ঙ্গে আমাদের চলাচল
 
আমিকে  প্রশ্ন করো, প্রশ্ন করো
সংশয়ের অরক্ষিত স‍্যানিটাইজ
ভূষণ্ডির মাঠে মৃত‍্যুপত্র ওড়ে
লাশে লাশে ভয়ার্ত হাইরাইজ
 
আজ শুধু মৃত‍্যুর পরোয়ানা
স্পর্শের জিহ্বায় লালার বণ‍্যা
রমণীয় রূপে লিপস্টিক ঠোঁটে

বসে আছে ওই বিষকণ‍্যা


 কবিতাঃ ৯
রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়

রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়
পতনের কিনারা থেকে
 
এখানে নিরাপদো বলে কেউ নেই
নিরাপদ বলে কিছু নেই
স্বয়ং দেব-শিল্পীও লখিন্দরের জন্য
গড়তে পারেন্নি নিঃশ্চিদ্র নিরাপত্তা...
 
বস্তুত,আমরা আত্মতুষ্টির কবিতা পড়ছি
আমরা আত্মতুষ্টির কবিতা শুনছি
ভেতরে জমি বাড়াচ্ছে নাভিশ্বাস
আমাদের ঠিকানা এখন আক্রান্ত সময়...
 
বলি, এখনো কী হয়নি সময় উদয়ের ?
নাহয় আমাদের প্ল্যানচেটে একদিন এসো
তে-পায়ার ইঙ্গিতে রেখে যেও

কয়েকটা স্বস্তিকথা....।

 

দুটি কবিতাঃ ১
চাণক্য বাড়ৈ
চা ণ ক্য  বা ড়ৈ
 
১.
গুপ্ত ঝরনার দিকে অভিযাত্রা

বেরিয়ে পড়েছি সাপ-নাচা জোছনার ভেতর, যারা উঠে যেতে চায় সাঁচীর স্তূপ বেয়ে, তারা সব ফণা তুলে আছে; বেশ, তারা আলগোছে গেঁথে দিক বিষদাঁত, এর চেয়ে চলো লরিয়া-নন্দনগড়ে, ওখানে আকাশের দিকে মুখ করে সারি সারি অশোকস্তম্ভ খাড়া হয়ে আছে, চলো, তার সিংহমুখ-চূড়ায় চুমু খেয়ে আসি। তারপর চলো, গুহার ভেতরে সেঁধিয়ে দিয়ে আসি উত্থিত ফণাগুলো, কে না জানে আমরা তুখোড় বেদেনি, একদিন যক্ষীর দেহ নিয়ে শুয়ে ছিলাম দিদারগঞ্জে, পাটনার উপভূমিজুড়ে, প্রত্ন-প্রতিমা ভেবে আজ যারা উপচার নিয়ে আমাদের অপেক্ষায় আছে, যাই, তাদের মুঠোয় তুলে দিয়ে আসি কাঙ্ক্ষিত আপেল...

ওরা দেখুক, কালো মেঘের কিনার ঘেঁষে দুটো তারা, তার নিচে ফুটে আছে গোলাপ, ওরা নিপুণ অভিযাত্রিক, আপেল বাগান রেখে পৌঁছে যাবে মাথিনের কূপ, এরপর মাড়িয়ে যাক আরও কিছু গুল্ম-বিরুৎ, এরপরই ঠিক ঠিক পেয়ে যাবে গুপ্ত ঝরনার খোঁজ—

এইবার, এই উষ্ণ জলে, ওরা সেরে নিক স্নান—
 
২.
তন্ত্রশাস্ত্র ঘেঁটে

উত্তর গোলার্ধ ছুঁয়ে উড়ে আসে কুয়াশা-কুণ্ডলী— পৃথিবীর প্রত্ন-প্রান্তরে নামে উষ্ণ শীতরাত— অবদমন-বনে ঘুমিয়ে ছিল যে আগুন-বাসনা, ঘর্ষণে ঘর্ষণে উসকে উঠবে বলে সে খোঁজে বিপরীত কাঠ...

পাথর যুগের বিকিরিত আভায় যারা নিয়েছিল বিবিধ পুরাণের পাঠ— সভ্যতার উদ্ভিন্ন কসরত নিয়ে তারাই শোনাল শেষে প্রাগৈতিহাসিক ধ্যানের আখ্যান...

সমিধ নীরবে গায় ‘শরীর এক সুসুপ্ত চিতা’— অন্ধের উপাধি পেয়ে ডুমুরের ডালে নাচে তান্ত্রিক পেঁচা— আর ভেল্কির থলে ছিঁড়ে বেরোল যে বেঢপ বেড়াল আমিষের থালা নিয়ে তাকে ডাকে কামাখ্যা-বালিকা...

 
দুটি কবিতাঃ--২

মা ধ বী  দা স 
মাধবী দাস
 
১.
আলপথ

ধান কাটা শেষ হলে
মৃত্তিমা উদোম হয়ে যায়
কোমল চারা রোয়ার দিনে
যে মাটি ক্ষীরের মতো থাকে নিঃস্বতা রিক্ততা নিয়ে 
পাথর হয় সে মাটি

গোপনে লুকিয়ে রাখা 
কিছু আঘাতের মতো
অজান্তে বেরিয়ে পড়ে 
জমির আঁকাবাঁকা আলপথ
মনে পড়ে অতিভুজ
আয়তক্ষেত্রের কথা...

আর সে জ্যামিতি থেকে
ক্রমাগত উঠে আসে
এক একটা সম্পর্কের ছক।
 
২. 
শূন্যতা 
 
বর্গাকার লাল কালো জামার পেছনে রুকস্যাক
পিঠের ওজন বাড়ে সাংকৃত্যায়ন পুঁথিপত্রে
সেলফোনে ঘনঘন বিদায়ের সুর 
নেমে আসে বিরহ বিকেল

ধূধূ শূন্য দ্বিগুণ হলেই 
বিসর্গ বানিয়ে দুঃখ এঁকে ফেলি 
দুচোখে শূন্যতা রেখে বাউণ্ডুলে হই
বাউন্ডারি ছুঁয়ে কিছু আঁকিবুঁকি করি

স্বপ্ন দেখা শেষ হলে কবিদের মৃত্যু হয়


দুটি কবিতাঃ--৩
বি দি শা  স র কা র 
বিদিশা সরকার
 
১.
বাসা বদলের পর

বাগান সম্পর্কিত ধারণা
মাটির চরিত্র সম্পর্কিত
দো-আশ এঁটেল
ঋতুপর্ণে লিখিনি কখনো
 
অবমাননার জন্য একটা বন্ধু জরুরি
হিমোগ্লোবিনের পারদ
ধমনী ছিঁড়ে বন্যা অধ্যুষিত
 
প্রয়োজন ছিল একটা অবিবেচক ব্লেড
 
আমাদের চারপাশে সেই সব আবাসন
হোম- ডেলিভারি ....
নীচু স্বরে ফয়সালা হয় সম্পর্কের পরবর্তী অধ্যায়
 
আমি ভাবি সেই সব গাছ
দৈবাৎ বৃষ্টিতে ভেজা ...
চুরি করে নারী স্বাধীনতা
এদের কী হবে ?

বাসা বদলের পর বাসা বদলের কথা ভাবি

 
২.
টগর মাস
 
হে প্রিয় বন্ধুরা,হে যুবা প্লবতায়
অধরা বৃষ্টির গান শোনাও
সুতানুটির দেশে এখনও বারোমাসে
বৃষ্টি রোজই আসে, অতনু তুই
এভাবে ভেসে গেলি কাগুজে নৌকায়
পলকা সুখটুকু আমারই থাক
ওরাতো দেখেছিল তোর আমার স্নানে
বদরি মুনিয়ারা টিন এজার !
এখনও বেঁচে থাকে এই শহরে, গানে
হারানো বন্ধু'র সই সাবুদ
বিচ্ছেদের আগে বিরহী বৃষ্টির
মন ভোলানো কিছু কাজরি ধুন!
রেইনকোটের দেশে একটা ছাতা নেই
সঙ্গদোষে ভিজি পয়লা মাস
পকেটে রোজগার অথচ গ্রহণের
আগেই বিধিমতো হে উপবাস।
তবে কি বৃষ্টিতে ঝাপসা ছিল সব
পড়তে পারিনি সে বাইফোকাল
তবু তো তোকে ভেবে উজালা হেসেছিল

বিজ্ঞাপনে ভেজা টগর মাস !



দুটি কবিতাঃ ৪
তুষ্টি ভট্টাচার্য
তু ষ্টি  ভ ট্টা চা র্য
ওয়াণ্ডারলাস্ট

১.
কী সুন্দর তাঁর পোশাক! আভিজাত তিনি ভ্রমণে যাবেন
যাওয়ার আগে মুখোমুখি হবেন পাহাড়ের
এসে দাঁড়ালেন এক পাথরের ওপর—
তাঁর মাথা ছাড়িয়ে গেছে পাহাড়ের চূড়া, পর্বতমালার ঢেউ, গাছের সারি
যদিও এই দৃশ্য খানিক অস্পষ্ট হয়েছে কুয়াশার আড়ালে
ওঁর এক পায়ের তলায় যেন পাথর নয় পুরো পৃথিবীই স্বেচ্ছায় মেলে দিয়েছে নিজেকে
অন্য পা গমনে উদ্যত—
এই দৃশ্য থেকে তাঁকে পৃথক করবে বলেই যেন কুহকের জন্ম হয়েছে
তাঁর না ব্লা ক্তহা আবছা হতে হতে আমাদের শোনা হ্ল না আর—
 
দৃশ্য থেকে সরে এসে ঋজু হয়েছে এক তীব্র ভ্রমণেচ্ছা
পথ যেখানে নিয়ে যেতে পারে না,

সেই অগম্যের প্রস্তুতি এখন—

 
২.
কীভাবে এলেন তিনি এই পাকা ফসলের ক্ষেতে
আমরা জানি না।
শস্য ভারে নুয়ে পড়া গাছগুলি
তাঁর মূল্যবান শাড়ির আঁচল টেনে ধরেছে
মমতায় ওদের গায়ে হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি—
এ মনোরম দৃশ্য দেখতে দেখতে আমাদের
দূরের হাতির পালের দিকে চোখ গেল
যেন অরণ্যের ভেতর থেকে জেগে উঠল আরেক অরণ্য
কালো বিন্দুগুলো ক্রমশ এগিয়ে আসছে....
 
অধিকার নিয়ে আমাদের ভাবনা গুলো সরে যাচ্ছে ক্রমশ...

এক একটা বিন্দুর মত মিলিয়ে যেতে দেখছি

 
দুটি কবিতাঃ ৫
বিপুল চক্রবর্তী
বি পু ল  চ ক্র ব র্তী
উজান
 
১. 
একটি পাখি
সেই কোন সকাল থেকে
একটানা শিস দিয়ে গান গেয়ে চলেছে
 
পাশের বাড়ির বাবুটি
বাজারে-অফিসে যাওয়া নেই
সেই শিস শুনে গান শুনে মুগ্ধ, জানতে চাইলেন
কী পাখি, কী নাম
 
বললাম, দোয়েল
বললাম, প্রায়ই গায়
কিন্তু সেই গান ঢাকা প’ড়ে থাকে
রিক্সার হর্ণ,বাইক আর মোটরের বিকট আওয়াজে
 
ঢাকা পড়ে যাওয়া কতকিছুই ইয়ে
জেগে উঠছে এই দীর্ণ সময়ে---
মূর্ত হয়ে উঠছে দশদিক
উড়িষ্যার সমুদ্রতটে ফিরে আসছে কচ্ছপেরা
মুম্বাইয়ে ডলফিন
 
আর ক্রমশ বিমূর্ত হয়ে উঠছে
মানুষের পথচলা
 
২.
সাময়িক এই বন্দিদশাকে
আমাদের পথচলা ব’লেই জানছ তুমি,মানলাম
কিন্তু তাদের কী হবে
কোনও ঘরই নেই যাদের বা যারা ঝুপড়িতে থাকে
দিন আনে দিন খায়
 
ছেলের এ কথার উওরে কী যে বলি---
মাথায় ঘুরতে থাকে
হেরাক্লিটাস থেকে হালফিলের যাকিছু দর্শন-ভাবনা
দুনিয়াকে কত ভাবেই না সাজানোর কথা, তবু
আমাদের সহস্র গৃহের পাশে,গৃহহীন
আমাদের সঞ্চিত পুঁজির পাশে, নিরন্ন মানুষ
 
পাশের ঘর থেকে মেয়ে এসে বলল---
ইতালি,চিন,আমেরিকার হাল দেখছ তো
অবস্থাপন্ন বা পথের ভিখিরি,কাউকেই ছাড়ছে না
‘কোভিড ১৯’
 
৩.
উজান,আমার নাতি
ওর কি এসব কথা শুনতে ভালো লাগে
টানতে টানতে নিয়ে যায় ওর আঁকা ড্রয়িং-এর কাছে
এঁকেছে স্বপ্নের রঙে একটি কার্ড
এঁকেছে আমার জন্যে---
 
ওর দাদুনের জন্মদিন যে আজ !
 

দুটি কবিতাঃ ৫ 

প্রবীর মণ্ডল
প্র বী র  ম ণ্ড ল
কবিতা
 
১.
তোমার না বলা কথা
কবিতা-জন্ম দেয়
 
আর কবিতার গায়ে
লেগে ইয়ায় বেদনা-শোক
 
২.
যাবতীয় সম্পর্কের আয়ু সুনির্দিষ্ট নয়
আমাদের বেঁচে থাকার আয়ুও
ঐ যে দূরে দাঁড়িয়ে বৃহত্তর গাছ
হয়তো তুমুল ঝড়ে ভেভে যাবে আজ
 
৩.
ভালোবাসা ও মৃত্যু সমান্তরাল
 
কীভাবে,কেমনে আসে
আমরা জানিই না
 
৪.
তোমাকে মনে রাখছি বলে
আমাকে তুমি রেখো না মনে
 
ভাবছি বসে অতীত কথা, স্মৃতি
 
৫.
লিখেছি বিষাদলিপি
এবং বিরহ-ম্লান
আবারও বিষাদলিপি

শুনব যে কবে আনন্দ-গান! 



গুচ্ছকবিতা ঃ

তৈমুর খান-এর ছয়টি কবিতা--

তৈমুর খান

কল্পতরুর বিকল্প ইতিহাস 

খুব বাড়াবাড়ি এখন বাড়ি বাড়ি ফেরে

ব্যবসা করে অথবা গণতন্ত্র বোঝায়

আমি হাঁটতে পারি না অত জোরে

বিস্ময়কে ঘাড়ে ধরে দুয়ারে দাঁড়াই

 

এত যে কাকলি ওদের, এত যে বাগান

চাকে চাকে জমে মধু, মাধবীরা আসে

বুকে নিতম্বে ঢেউ, ঠোঁটে ভরা গান

জয়-জয়াকর বাঁশি বাজে উল্লাসে

 

দূরে সন্ধ্যার মিনতির কাছে দৃষ্টি রাখি

যুগের নদীরা যায় কোন্ বন্ধ্যার বাড়ি?

সহ্য করি আমার বিষাদ, চুপচাপ থাকি

এভাবে উলঙ্গ হয় সঙ্গমের নষ্ট তরবারি!

 

ছলাকলা ফলে দেখি সেসব বাগানে

কৌশলী বাগানি দেয় মোহিনী বিভাস

মানুষেরা পতঙ্গ হয়ে অদ্ভুত কম্পনে

 

স্ফুলিঙ্গ

 

কত যে স্ফুলিঙ্গ ছিল

আলোর সংকেতে তারা উড়ত বহুদূর

ঘুমপাখা ছেড়ে নতুন আকাশের দিকে

নতুন নতুন বৃহৎ সমুদ্দুর


কখনও কি ক্রোধের বিজ্ঞাপন হত?

কখনও কি তাপদগ্ধ প্রোজ্জ্বল আগুন?

সেসব কিছুই নয়, উড়ানের ওপারে উড়ান

নিয়ত বিস্তার শুধু কল্পনার প্রগলভ গান


আজ যদিও কিছুটা ছাই

উষ্ণ উচ্চারণের বিস্ময়

আর উড়ানের ঘোর লেগে আছে

তুমি এসে ছুঁয়ে দাও তাকে উপলব্ধির নতুন টংকারে

পুরোনো প্রেমিক


কত তির বিঁধে আছে বুকে

তবুও নতুন আলোর গানের কাছে

সুর চাইতে এসেছি

সব ক্ষত ঢেকে আবার জ্যোৎস্নায়

কিছুটা উপশম চেয়েছি

 

ওদের বারান্দায় নেমেছে কত সাদা পাখি

রোদের সুস্পষ্ট উচ্চারণগুলি তাদের ঠোঁটে ঠোঁটে স্বরলিপি

গড়ে যাচ্ছে শূন্যতায়, উচ্ছ্বাসে

 

ভোরবেলার দিকে কোনও নক্ষত্রের কাছে

নিজের জাগরণ লুকিয়ে

এখনও লজ্জানত আমি

 

দৃশ্যের ভেতর 

দৃশ্য বদলে যাচ্ছে

আমরা সংকটের ঘরগেরস্থালি সাজাচ্ছি

শূন্যতার আয়নায় মুখ দেখছি

আমাদের উঠোন ঘিরে স্মৃতির গোলাপি হাত

                                          ভেসে উঠছে বারবার

ঘরের চৌকাঠে প্রদীপ জ্বালিয়ে দিয়েছে মা

মায়াপ্রদীপ এখনও নেভেনি

বাবা বাড়ি ফিরবে, ফিরবেই

আবহমান সমস্ত বাবা- বাড়ি ফিরবে একদিন

সামঞ্জস্যবিহীন দরজায়


আমাদের চৈতন্যের হাওয়া বয়ে যাচ্ছে

আশাগাছে ফুল আসতে শুরু করেছে

আর দৃশ্যের ভেতর লাল ঠোঁটওয়ালা পাখি

 

                 ডেকে উঠছে বারবার…. 

 

বিস্ময়চিহ্ন

মৃত্যুর কাছে জীবনের চাবি

               চাইতে এসে

                     লজ্জায় দাঁড়িয়ে আছি

 

সেই ভোরবেলা থেকে কতটা পথ

                 অতিক্রম করে এসে

                          এখন অস্ত সূর্যের আলো

স্মৃতির প্রান্তর জুড়ে কত বাল্যকাল

                        ছুটোছুটি করে

 

কত মমতার দিঘিতে সাঁতার কাটি

ঠিক দুপুর হতেই কার গুঞ্জন

                 আমাকে ঢিল ছুঁড়ে মেরেছিল?

 

তার নাম কাউকে বলিনি

আন্দোলিত ইতিহাস আজ

                 চুপচাপ শুয়ে আছে জানালায়

 

তার কমলা রঙের ফ্রক

                   আমার কাব্যের প্রচ্ছদ 

কয়েক ছটাক নীরবতা শুধু

আমাদের পরস্পর বিস্ময় চিহ্নের মতো মনে হয়

দ্বান্দ্বিক

 

এত রাস্তা দেখাচ্ছ, কোন্ রাস্তা দিয়ে যাব?

 

দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোকান, সংকট খুলেছে ধর্মশালা

রাজনীতি পতাকা উড়িয়ে লিখেছে, মুশকিল আসান!

 

রাস্তা দেখতে দেখতে

    দ্বিধা-দ্বন্দ্বের দোকানে চা খেতে খেতে

          সংকটের ধর্মশালায় ধর্মদাস হতে হতে

                 পতাকা দেখাচ্ছে মুশকিল আসান 

কিন্তু যাব কোন্ দিকে?

সংযোগ অব্যয়গুলি ঘুর ঘুর করে

     ক্রিয়াপদের ঠোঁটে মধু জমে

          আমি নির্বোধ পাক খাই নিজের অন্ধকারে

  

জীবন একটা মোরগ হতে চায়

     জীবন একটা কাক হতে চায়

            জীবন শুধুই অযোগবাহ

       টোপর পরে হাসতে চায় বিবাহমঙ্গলে....

 ্গুচ্ছ কবিতাঃ২

প্রদীপ মণ্ডল

প্র দী প ম ণ্ড ল

অন্তর্যামী
 
 ‘‘ বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি ... ... ...’’
 
নৈঃশব্দের কথা শুনতে পাও বলেই ভাষা থাকে মুক
বক্তব্য আমার হয় না, এটাও বিচার্য নয়
কবিগুরুর গানের সুর ও রেওয়াজ কতটা
আন্তরিকভাবে মিলছে মূদ্রায়
মরমে মরমে ভাগ করে নিচ্ছিলাম
যাতে সমজদার হওয়া যায়
 
যত না লেখা ছেড়েছি তারচেয়েও
ছেড়েছো বেশি গান,
আঁকাটা তো এখন আশ্চর্য
অকল্পনীয় হলেও সত্যি, তবুও
গরমের রুদ্ধশ্বাস মায়ায় রজনীর গন্ধে
কেঁপে উঠল ঠোঁট
আহা ! মন্ত্রমুগ্ধ সুর—
 
ধুসর পান্ডুলিপি হতে ক্রম স্পষ্ট হয় অক্ষর
ক্যাক্টাসে ক্যাক্টাসে ফোটে ফুল
উবে যাওয়া অশ্রু লেগে মেঘেদের ভাঙে ভুল
শপথ রেখেছি আমি
জানেন গুরুদেব অন্তর্যামী ... ...
 
ছবি ও কথারা ...

 
তুমি চাও রাজপুত্রের মত পুরুষ কি সুন্দর কি সুন্দর দেখতে
আমার কি দোষ, বিধাতাই তো আমাকে এমন ক’রে গড়েছে
না হয় সেরকম হইনি
তাই বলে কি কৃষ্ণচূড়া,পদ্ম,জুঁইমালা এনে দেই না
দি’তো, উদাসীন গোলাপের বন, মল্লিকা বকুল
সবইতো তোমার জন্য রাখি
দুপুরবেলার মেঘকে বড়ো ভয় পাও
বড্ড একা একা লাগে
অকারণে হলেও সেই কথাগুলি ব’লো
মিথ্যে করে হলেও তাই ব’লো
সারাদিন সারাক্ষণ আমার ফোন খোলা থাকে
 
রঙ্‌ করতে না চাও
অক্ষরে অক্ষর সাজিয়ে এঁকে দিও
যদি না পারো ঠোঁটের মত কোন চিহ্ন রেখো
তবু দিও!এক মুঠো রোদ্দুর চাই
চুমুগুলো দেখ এখনও বাতাসে ভেসে আছে
শুনতে পাচ্ছো পলাশ ফুল কানে কানে বলছে
সেই সন্ধ্যার কথা
রিক্সার চাকায় চাকায় যেদিন শেষ হয়েছিল
বৃষ্টি ভেঁজা পথ
মনে পড়ে !
 
মিথ্যে ক’রে হলেও একবার মিস্‌ড্‌ কল ক’রো
ভুল করে হলেও একবার ব’লো ভালোবাসি
 
কবে যে প্যাভলভ হয়ে যাবো কে জানে ...

 
অপ্রিয়
 
 
আমার কোন প্রিয় মানুষ নেই । অনেক
মানুষের কাছে অপ্রিয় আমি
কাজই আমার প্রিয়, নীরবতা আমার সুখ
সময় পাল্টানোর সাথে সাথে রুচি, ভাষা
পাল্টে যাচ্ছে সব । মৃদুস্বরে কথা বললে
এখন শোনেনা কেউ—
গাছেদের তাই কষ্ট, প্রেম লিফ্টে চেপে উঠে যায় ফ্ল্যাটে
বইমেলায় কতখুঁজেছি কাউকে একটা বই উপহার দেবো ভেবে
যত কাছে এগিয়ে যাই আলোকস্তম্ভ দেখি
মমর্তর পাশটা খোঁজা শুধু বাকি—
 
হাতের আঙুল চেটেদেখছে পটের কারুকাজ ইত্যাদি ইত্যাদি
গোয়েন্দাগল্পের সৌখিনগোয়েন্দার মত
আরেকবার ভাবছি দেবো কিনা হাতে
 
বাংলায় লেখা ? না থাক রাখার যায়গা নেই বাড়িতে ।

 
অ-সুখ

 
কতদিন পড়েনি চোখে চোখ দেখিনি মুখ
ভাবছি আর মনের কোনে জমা দেখছি অসুখ
সবেদা রঙের ঠোঁট শুকিয়ে গেছে মুহূর্তে
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ঘূর্ণাবর্ত হয়ে উড়ে গেল দিগন্তে
নিজেকে অপরাধী মনে হ’লো জানো !
বলি বলি করেও বলা হলোনা কি একটা ভেবেছিলাম
শপথের কথা স্মরণ করিয়ে দায়িত্ব সেধেছো বেশ
হেমন্তের রোদে মেলে ধরলেও আঁচল
বুঝলাম ভালো নেই ---
সবটাই মুহূর্ত কথা, এক বিস্মৃতের খোঁজে
রঙে রসে জাল বোনা
 
ক্ষণিকের পলাশ বনে বসন্তের ফালগুনি ।

 
বেনামী ইস্তাহার

 
চৈত্রের ভরা দুপুরে সখ্যতা
সমস্ত মহাদেশ জুড়ে মার্গ সঙ্গীতের সুর
ভিড় ঠেলে কাছে যাওয়ার আগেই হারিয়ে ফেলি
বেনামী ইস্তেহার ...
পুরনো সেই মুখটিকে বারবার আঁকি
জাফরান কাপড়ে জড়ানো মুখ
মুখের বাদিকে একটি প্রেমেপড়া দাগ
বাঁকানো ধনুকের নিচে উজ্জ্বল কালো চোখ
সযত্নে দাগকাটি স্বপ্নচারী রঙ হয়েযায় ভুল
ঠোঁট থেকে আলো ঠিকরে পড়ে নয়তো উড়োচুল
অতর্কিতে ঝড় বয়ে যায় সাড়েবাইশ ডিগ্রি দ্রাঘিমায়
ভালোবাসা বকুনি খেয়ে হারায় লৌকিকিতা
ক্যানভাসের পাঁজর ভেঙে গজায় বিস্তীর্ণ আগাছা
গোধূলি-শত্রু শোনায় শচীন কর্তার গান
যতবার মনে করার চেষ্টা করি চলে যাই
দূরে ক্রমশ দূরে । সমস্ত জেব্রাক্রসিং মোমাবতিহীন
আর উদারতা রাত্রিকালীন উপপাদ্য
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর...
নতুন করে গাছ লাগালে, সবুজ গাছ
পাখি এসে গাইল গান । নৈঃশব্দতা কেটে
বয়ে গেল শান্ত বাতাস

অথচ ইনবক্স জেগে থাকে রোজ রাতে ...

 


অণুগল্পঃ ১.

বোধিসত্ত্ব রায়

সয়নানদীর আয়নাকথা

বোধিসত্ত্ব রায়


শুনে সে মুচকি হাসল। তাকে নিয়ে যেতে স্বাস্থ্য দফতরের মেয়েরা এসেছে। সে তাদের সঙ্গে ক কথা বলে এগিয়ে এল আমার কাছে। বলল, এখনও পাও। কেবল স্বীকার করো না। শোনও রাজামশাই, আমি লেপ্রসি ক্যাম্প থেকে একটু কাজ সেরে আসি। ওই যে সামনের পথ দিয়ে খানিক গেলে সয়না নদী। ওখানে খানিক রাজ্যপাট চালাও। আমি এই গেলাম, আর এই এলাম। ...মেহুলি গাড়ি থেকে নেমে বলল, কী নদী গন্ধ পাচ্ছো? হেসে বললাম, পেতাম হয়তো কস্মিন যস্মিন কালে। ..

... সয়না নদী। কে দিয়েছিল এমন মিষ্টি মতো নাম! অবিকল যেন কোনও পালাগানের কবিয়ালের বাবুদের বারবাড়ির উঠোনে দেহতত্ব গানে বার বার বলা এক খান শব্দ। কী অদ্ভূত মায়া আর কাকুতির মিশেন, সয়নায়!

আহা সয়না। নীলচে কাচ কাচ জলবুকে থইথই কচুরিপানার ডগমগ। ঈষৎ নীলচে ফুল এসেছে তার পঞ্চদশী বুকে। তাই বুকময় ভ্রমরের ওড়াউড়ি। এখন এই মাঝেলা দুপুরের বাতাসে জাল পাহারার খান কয় মেছো নৌকা জলময় অলস চরছে। পারের কাছে ঝুঁকে থাকা শিশুবটের কচি ডালে দোল খেয়ে যাচ্ছে চিত্রবিচিত্র রঙের তিন খান মাছরাঙা। আমায় সয়না পারে বসতে দেখে ফুরফুরিয়ে উড়লে তারা। জল ছুঁয়ে বার কয় চক্কর কেটে বসলে দূরের হিঞ্চে গাছের ডালে।...

... মানুষের মতো নদীরও গন্ধ থাকে বুঝি? নাকি সব মানুষেও নদী থাকে। কাছে এলে মানুষও নদী হয়ে সরে সরে যায়। ...

... আবিষ্টের মতো জলশেওলার উপরে লাল ফড়িঙের ওড়াওড়িতে দেখছিলাম। কচিপানা এক বালকের গলা পেয়ে খেয়াল করলাম, বটছায়ার ওপারটায় এক প্রৌঢ়ার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বছর সাত আটের এক বালক। হাত পা নাড়া দেখে মনে হল সে কিছু এক আব্দার জুড়েছে।...

...তার ক কথা কাটা কাটা ভেসে এল এমন, "... তুমি যে বলেছিলে। আসবেই আসবে। তা এল কই? সেই যে গেল বড়পুজোর আগে।... কেমন দুষ্টু, যাবে তা আমায় বলেও নি। এখন শ্যামাপুজোও বয়ে গেল। শিত্তিরকাল এলে সয়নার জল কমে যাবে। তখন নৌকায় করে তিনি আসবে কেমন করে?..."

.. প্রৌঢ়া অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে হাত তুলে বলল, আসবে বলেই তো গেল। দেখিস আসবেন তিনি। ও-ই-ই পিরতলার ঘাট পেরিয়ে সো-জা এই এখানে। অনেক দূরে গিয়েছেন বোধহয় তাই ফিরতে ক রাত বেশি লাগছে।...

... -কিগো হল আপনার নদী দেখা? এবার ফিরতে হবে তো। মেহুলির গলা পেয়ে উঠে দাঁড়ালাম। মেহুলির সঙ্গে আর এক তরুণী। মেহুলি বলল, ইনি হলেন বনলতা। তোমার ফেসবুক বন্ধু। আজ তুমি এসেছ শুনে আলাপ করতে এলেন। বনলতা হেসে বললেন, আমার কর্তাও আপনার ফ্যান। মেহুলি বলল, বনলতা তোমার বইটইও কিনে ফেলেছে, বুঝলে! হাতজোড় করে নমস্কার করলাম। আড়চোখে সেই বালক আর প্রৌঢ়াকে দেখার চেষ্টা করছিলাম। ...

... ওদিকে এখন সেই বালককে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রৌঢ়া। বালক অস্থির ভাবে হাত পা ছুঁড়ছে। বনলতা আমার দৃষ্টিপথ অনুসরণ করে বলল, ওই বাচ্চাটার ঠাকুর্দা মহালয়ার আগের দিন মারা গিয়েছে। বাচ্চাটা তখন মামাবাড়ি ছিল। ও জানে ঠাকুর্দা তীর্থে গেছে। তাই স্কুলের পর রোজ আসে সয়নার পারে। আর ওর ঠাম্মা রোজ একটা কিছুমিছু বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে যায়।... মেহুলি গম্ভীর গলায় বলল, ডেঙ্গু? বনলতা মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ ম্যাডাম। সদরে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু....

... বালককে নিয়ে গাঁয়ে ফিরে যাচ্ছে ঠাম্মা। ভঙ্গী দেখে মনে হচ্ছে, ওরা দুজনেই ক্লান্ত। ওরা ঝুঁকে হাঁটছে। শিশু মনে অপেক্ষার পাথরভার বাড়ছে। প্রৌঢ়া নিজের সঙ্গে লড়তে লড়তে বেঁচে থেকেও রোজ নিভে আসছেন। একদিন শিশুরা না ফেরার দেশ দেখে রাতের আকাশের জরিপাড় তারায় তারায়। বড়দের সে উপায় নেই। তারা জানে মুছে যাওয়া মানুষ আকাশ-গঙ্গা পেরিয়ে যায়। ফেরার আর ফিরাবার সাধ্য থাকে না কারও। ..

...মনে হল বলি, " মানুষ কাছাকাছি আসে দূরে চলে যাবে তাই। মানুষে নদীতে বড় ভালবাসি। সব মানুষই একদিন নদী হয়ে বয়ে যায় তাই"।


অণুগল্পঃ ২.

দিলীপকুমার মিস্ত্রী

নিউ ডিজিজ

দিলীপকুমার মিস্ত্রী


সাইকিয়াট্রিস্ট ডক্টর কর্মকারের চেম্বারে মুখোমুখি বসে রয়েছেন অধ‍্যাপিকা মিসেস মিত্রনা, ওঁনার নিজের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা পুত্র অনুময়কে নিয়ে। আঠাশ বছরের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেটা বরাবরের মেধাবীবাধ‍্য এবং শান্ত শিষ্ট। কিন্তু কিছুদিন হলসে ভীষণ অসংলগ্ন আচার-আচরণ করছেদুজনের আলোচনা চলছে

     ‘সমস‍্যাটা কত দিনের ?’

    ‘এইতো,অল্প দিনের

    ‘হঠাৎ এমন যে হল,কী কারণ হতে পারে ? আপনার নিজের কী মনেহয়?’

   ‘কি বলবো বলুন তো। হঠাৎ কী করে, কী যে হয়ে গেলআমি কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছিনাছেলেটা বরাবরই সকলের খুব বাধ্য ছিল। মাত্র কয়েকটা দিনের মধ্যে কেমন হয়ে গেল।‘

  ‘একমাস ধরে তো লকডাউন চলেছেওতোএতোদিন গৃহবন্দী হয়েইছিলতাহলেকী করে হলএমন পরিস্থিতি ?’

আমি তো আপনাকে ওই লকডাউনের কথাটাই বলতে চাইছি। আমার মনে হয়,ওটাই এর মূল কারণ

তাই ! কিন্তু এমনটা ভাবছেন কেন ? লকডাউনের সঙ্গে ছেলেরএমন বদলে যাওয়ার সম্পর্ক কী থাকতে পারে?’

     ‘দেখুন,ঐ সময়ে সমস্ত মিডিয়ায় ডাক্তার বাবুরা বারবার পরামর্শ দিচ্ছিলেন, একঘন্টা অন্তর হাত-ধোয়া খুবই জরুরী। ব‍্যাস, বাজার থেকে সমস্ত হ‍্যান্ডওয়াস, স‍্যানিটাইজার উধাও হয়েগেল নিমেষেতখন ছেলে আমার এক ডাক্তার-বন্ধুর কথা মতো অ্যালকোহল জাতীয় কোনো ড্রিংকস নিয়ে এসেছিলও দিয়েই হাত ধুচ্ছিল। তারপরগৃহবন্দী থাকার অবসাদ থেকে মুক্তিপেতেমাঝে-মধ্যে ওই চাই-পাঁষ খেয়ে ফেলছিল। ব‍্যস ! সেটাই অভ‍্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে। এখন ওটা পাচ্ছেনা বলেই----! ডক্টরআমি বলছি আপনাকেঐ লকডাউন ব‍্যাপারটা নাএলে, আমার ছেলেটার এমন রোগ হোতোই না

    ‘রাইট ইউ। আই অল সো সাসপেক্ট দ‍্য সেম। রোগটা করোনা রিলেটেড এবং লকডাউনের সাইড এফেক্ট মনে হচ্ছে। মোস্ট ক্রিটিক্যাল আই থিংকবাট কিউরিবেল্। ডোন্ট অরি মিসেস মিত্র


অণুগল্পঃ ৩.

বিদ্যুৎ বিশ্বাস

ম্যাজিক বুড়

বিদ্যুৎ বিশ্বাস


ম্যাজিক বুড় মারা গেল । আমি যখন ছয় সাত তখনও সে বুড়। নতুন  বাড়ি করে আমরা ম্যাজিক বুড়র পাড়ায় সবে এসেছি। একদিন রাস্তায় ছোটদের সাথে খেলছি। রাস্তা পাশে বুড় বসে। বলল, এই দাদু, কাছে আয়, ম্যাজিক দেখাব। কাছে যেতেই বুড় এক টানে আমার প্যান্ট খুলে দিয়ে হো হো করে হেসে উঠল। পাশে যারা ছিল তারাও হাসল। লজ্জা, ক্ষোভ, বেদনা- সবটাই হল। দুইদিন বাদে সব ভুলে বুড়র নাম দিলাম ম্যাজিক বুড়। সেই থেকে বুড়র নতুন পরিচিতি হল।

আজ অফিসে বস একটা শোকজ ধরিয়ে শাসালেন, আপনার জবাবে মালিক খুশি না হলে বেতনের সঙ্গে  সার্ভিস লেন্থ কাটা যাবে। মনমরা হয়ে বাড়ি এসে শুনলাম, ম্যাজিক বুড় মারা গেছে।

তখনই মনে হল, ম্যাজিক বুড় সেদিন প্যান্ট খুলে মজা করেছিল। আর এখন মনে হল-  মালিক আমার মৌলিক অধিকারের পোশাক খুলে সভ্যসমাজে পুরোপুরি নগ্ন করে ফেলেছে।

ম্যাজিক বুড় মরেছে, আমিও মরব একদিন, কিন্তু এই ম্যাজিশিয়ান কি কোনোদিন মরবে?


------------------------------------------------------------------------------------------------

আত্মশক্তি
 (বিশ্ব সেবাসংঘ আশ্রম-এর ত্রৈমাসিক মুখপত্র), Printings Issues ISSN no 2321 5062 
সম্পাদকঃ প্রদীপ মণ্ডল,আত্মশক্তি কার্যালয়,শিমুলপুর,ঠাকুরনগর,পশ্চিমবঙ্গ,ভারত, mo no-9434445675,
E-mail.atmashakti2@gmail.com, Blogg. http//atmashakti2.bloggspot.com

----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------